রূপগঞ্জ সংবাদদাতাঃ
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার দাউদপুর ইউনিয়নের বেলদী ক্যাবল নেটওয়ার্ক অবৈধভাবে বিদেশী পে-চ্যানেল প্রদর্শন করে হুন্ডিতে বিপুল পরিমাণ টাকা বিদেশে পাচার করে আসছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাতে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
গত ১০ জুন নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে এলাকাবাসীর পক্ষে দেয়া অভিযোগ থেকে জানা গেছে, পে-চ্যানেল ডিষ্ট্রিবিউটর থেকে অনুমোদন না নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বেলদী ক্যাবল নেটওয়ার্ক এ ব্যবসা পাইরেসি করে অবাধে চালিয়ে যাচ্ছে। যা ক্যাবল আইন ২০০৬ এর পরিপন্থি। স্থানীয় সন্ত্রাসীদের সহযোগিতায় ফিড লাইন দিয়ে গ্রামে গ্রামে তারা এসকল অবৈধ সংযোগ দিচ্ছে। অনুমোদিত ক্যাবল নেটওয়ার্কের এম.নোট, ফাইবার ও আরসিসিক্স (তামারতার) কেটে নিয়ে যাচ্ছে তারা। এ সকল ঘটনায় রূপগঞ্জ থানায় পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করা হলেও পুলিশ অজ্ঞাত কারণে নীরব ভুমিকা পালন করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করলে তিনি রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে তদন্তের নির্দেশ দেন। এক পর্যায়ে শিমলা পূর্বাচল ক্যাবল এর মালিক এমদাদুল হক চিনি মিয়া লাইসেন্স প্রাপ্ত না হয়ে এ ব্যবসা আর করবেন না মর্মে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে মুসলেকা দিয়ে জটিলতা নিরসন করেন। কিন্তু কিছুদিন পরেই তিনি আবার অভৈধভাবে এ ব্যবসা শুরু করেন। তাতে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বীর হাটাব গ্রামের ইব্রাহীম, নোয়াগাঁও গ্রামের সবুজ মোল্লা, বেলদী গ্রামের মহসীন মিয়া, গোবিন্দপুরের এমদাদুল হক চিনি মিয়া অবৈধভাবে পে-চ্যানেল পাইরেসি করে টিভি নেটওয়ার্কের ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। পূর্বাচল ক্যাবল টিভি নেটওয়ার্কের স্বত্তাধিকারী মোঃ হুমায়ন কবির মিয়া ২০১৭ সালে ১৪ ফেব্রুয়ারি মহামান্য হাইকোর্টে রীট পিটিশন করেন। পিটিশন নং-১৪৪০/১৭। পরে হাইকোর্ট অবৈধ ক্যাবল টিভি নেটওয়ার্ক কেন বন্ধ করা হবে না মর্মে কারণ দর্শাতে বলেন। ক্যাবল অপারেটর এমদাদুল হক চিনি মিয়া উক্ত আদেশ প্রাপ্ত হয়েও হাইকোর্টের সেই নির্দেশ অমান্য করছেন। এছাড়া ২০১৭ সালের ৯মার্চ বাংলাদেশ টেলিভিশনের লাইসেন্স ম্যানেজার মোঃ জুলফিকার রহমান কোরাইশী মোবাইল কোর্ট পরিচালনার জন্য রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে নির্দেশ দিলেও অজ্ঞাত কারণে তা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি।
অভিযোগ থেকে আরও জানা যায়, বেলদী ক্যাবল নেটওয়ার্ক অবৈধভাবে টাটা স্কাই, সান টিভি, সিলাইন সার্ভার ও পাইরেসির মাধ্যমে ন্যাশনওয়াইড ও যাদু ব্রডব্যান্ড লিমিটেড কর্তৃক পরিবেশিত বিভিন্ন পে-চ্যানেলে ডাউনলিংক করে সম্প্রচার করছে। যা ক্যাবল টেলিভিশন লাইসেন্স বিধিমালা ২০১০ এর পরিপন্থি। উক্ত ক্যাবল নেটওয়ার্ক বছরে বিপুল পরিমাণ টাকা হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাচার করছে। তাতে সরকার বিপুল পরিমাণ টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে।
তথ্য মন্ত্রণালয়, টিভি-০২ শাখা এবং বাংলাদেশ টেলিভিশনের লাইসেন্স শাখার ও ডিষ্ট্রিবিউটর থেকে অনুমোদন না নিয়ে পাইরেসি করে অবৈধভাবে তারা পে-চ্যানেল প্রদর্শন করে আসছে। সুষ্ঠুভাবে ক্যাবল ব্যবসা পরিচালনা নীতি লঙ্ঘিত হচ্ছে। বৈধ অনুমতি ছাড়া বিদেশী চ্যানেল টেলিভিশনে প্রদর্শন করা ফৌজদারী অপরাধ, যা সশ্রম কারাদন্ড বা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডনীয় অপরাধ।
তথ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মোঃ আখতারুল তালুকদার বলেন, তথ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ও বাংলাদেশ টেলিভিশন কর্তৃপক্ষের যথাযথ লাইসেন্স ফি পরিশোধ করে ডিষ্ট্রিবিউটর লাইসেন্স গ্রহণ করতে হবে। পরে বিদেশী পে-চ্যানেল বৈধ ক্যাবল অপারেটরদের মাধ্যমে টেলিভিশনের গ্রাহকদের মাঝে পরিবেশন করা হয়। কিন্তু তা না করে কতিপয় ক্যাবল অপারেটর অবৈধভাবে পে-চ্যানেল সম্প্রচার করছে। যা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ।
বাংলাদেশ টেলিভিশন লাইসেন্স ম্যানেজার মোঃ জুলফিকার রহমান কোরাইশী বলেন, যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তির মাধ্যমে অবৈধ পন্থায় পাইরেসি করে গ্রাহক পর্যায় যারা পে-চ্যানেল ডাউনলিংক, বিতরণ ও প্রদর্শন করে তাদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র বলেন, অভিযোগের প্রেক্ষিতে অবৈধ পাইরেসিকৃত বেলদী ক্যাবল টিভি নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গত ২৭ ফেব্রুয়ারি রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ প্রদান করেছেন।
অভিযুক্ত বেলদী ক্যাবল নেটওয়ার্কের স্বত্তাধীকারী মহসীন মিয়া এসকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, অনুমোদন নিয়েই এ ব্যবসা করছি। এর বাইরে তিনি কিছু বলতে অস্বীকার করেন।
রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুযায়ী সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে শিগগিরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।